Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

দর্শনীয় স্থান

প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে মন ছুঁয়ে দেওয়ার মত একটি দর্শনীয় স্থান বরগুনা জেলার তালতলী উপকূল। এখানে রয়েছে রাখাইন অধ্যুষিত একটি পল্লী। সমুদ্র উপকুল হওয়ায় চোখে পরে জেলেদের জীবনধারা। তার সাথে রয়েছে সোনাকাটা ইকোপার্ক। তালতলীর নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে সোনাকাটা ইকোপার্ক অন্যতম গুরুত্ব বহন করে। ভৌগোলিক সীমারেখা বিবেচনায় সোনাকাটা তালতলী শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। পূর্বে কুয়াকাটার অবস্থান খুবই সন্নিকটে। তাই বলাই চলে বরগুনার তালতলী হতে পারে বরিশাল বিভাগের অন্যতম পর্যটন অঞ্চল। ভালোলাগার মত জায়গা হওয়া সত্ত্বেও পর্যটক সংকটে রয়েছে তালতলীর সোনাকাটা ইকোপার্ক।

সোনাকাটা ইকোপার্ক সৌন্দর্যের গুরুত্ব বহনের অন্যতম কারণ এখানে রয়েছে বিশাল ম্যানগ্রোভ বনভূমি। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনভূমি ও সমুদ্র সৈকত একই সাথে উপভোগ করা আর তার সাথে বন্য পশুপাখি দেখার সুযোগ। বনের কাছে গেলেই পাখির কণ্ঠের স্বরলিপি, বনভূমিতে পা দিতেই হরিণের বেষ্টনী, কিছুটা সামনে হাঁটলেই বাঘ, শুকোর আর কুমিরের বেষ্টনী। এছাড়া উন্মুক্ত কাঠবিড়ালি, বন মোরগ, পাখি, প্রজাপতি, মৌচাক আর সাপ দেখার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে এখানে।

 

১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির উপর সংরক্ষিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি এই বনভূমি। এখানে শীত মৌসুমে সড়ক পথে নৌ-ভ্রমণে আসা শত শত পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে এ বনাঞ্চল। বছরের কার্তিক মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলে পিকনিকের উৎসব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণ ও পিকনিক করতে আসছে শত শত পর্যটক।

 

 

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সখিনা বিটে ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬শ’ টাকা ব্যয়ে এই ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে সময় প্রাণীর জন্যে অভয়ারণ্যে ৮টি হরিণ, ২৪টি শুকর, ৮টি চিতাবাঘ, দুটি অজগর এবং দুটি সজারু দিয়ে সাজানো হয় এই বনটি। সেই সঙ্গে এখানে একটি কুমির প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করে তিনটি কুমির ছাড়া হয়। কুমির তিনটির নাম দেওয়া হয় এই বনের নাম অনুসারে- টেংরা, গিরি ও সখিনা।

চোখ জুড়ানো এ বনের ভেতর থেকে হেটে গিয়ে শেষ প্রান্তে দেখা মিলবে সমুদ্র সৈকত। এ অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি ইকোপার্কে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় এই বনাঞ্চলের সাগর তীরে দাড়িয়ে। কিন্তু সমুদ্রের দ্বারে যেতে পর্যটকদের ভোগান্তির শেষ নেই। তাই প্রতিনিয়ত কমতে চলেছে পর্যটকদের সংখ্যা।

 

 

বনের ভেতরে দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য সকিনা খাল থেকে সাগরের মোহনা পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয় ইট দিয়ে। তবে রাস্তাটির এখন বেহাল দশা। সংস্কারের অভাবে সড়কের অনেক যায়গায় নেই ইট, বর্ষা মৌসুমে কাদা জল পাড়ি দিতে হয়।

ইকোপার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পর্যটকদের সুবিধার্থে চলাচলের জন্য বনের ভেতরে বিভিন্ন খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছিল ১৬টি কাঠের সেতু, ৪টি গভীর নলকূপ, ৪টি টয়লেট ও ৪টি গোল আকারের বিশ্রামাগার।

 

 

ইকোপার্কে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বনের ভেতরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য বসানো ৪টি নলকূপের ৩টি অকেজো। টয়লেট ৪টির দরজা-জানালা কিছুই নেই। ফলে এসকল টয়লেট এখন সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী। পার্কের ভেতরে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য গোল আকৃতির ৪টি বিশ্রামাগার। এ সকল বিশ্রামাগার সংস্কারের অভাবে পলেস্তারা খসে পড়েছে।

পার্কের প্রবেশ দ্বারে রয়েছে সকিনা খালের উপর রয়েছে একটি লোহার সেতু। সেতুটি জরাজীর্ণ হওয়ায় মাঝে মাঝে পাটাতন খসে খালে পড়ে। একই সাথে সেতুর উপর লোকজন উঠলেই দুলতে থাকে এ সেতু ফলে ভয়ে সেতু পার হতে চান না অনেকেই। সেতুটি ধসে যেকোনো সময় পার্কের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

 

ইকোপার্কে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী হাসিব্বিন মোস্তফা শান্ত বলেন, ‘একসাথে সমুদ্র ও বনাঞ্চল, নানা প্রজাতির পাখি, গাছপালা, বন্য প্রাণী সবমিলিয়ে একটি ভালো লাগার মত স্থান এটি। প্রকৃতির প্রেমে পড়ে এই প্রথম এলাম এখানে। কিন্তু পার্কের বর্তমানে বেহাল দশা। প্রথমেই দেখলাম গাড়ি বা মোটর সাইকেল পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই, এতে পর্যটকদের মনে ভয় থাকে। আর বনের ভেতরে যে অবস্থা তাতে পথ পাড়ি দিতে খুব কষ্ট হয়েছে।’

বরগুনার স্থানীয় সাংবাদিক সুমন শিকদার বলেন, ‘সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ইকোপার্ক নির্মাণ করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কার ও ঠিকাদারদের নিম্নমানের কাজের জন্য ইকোপার্ক ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ইকোপার্কটি সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ পার্কের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দ্রুত সংস্কারের দাবী জানাই।’

 

 

সকিনা বিটের বন কর্মকর্তা ও পার্কের দায়িত্বে নিয়োজিত সজীব কুমার মজুমদার জানান, শুরুতে পার্কটি জম-জমাট ছিল। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। বেশ কিছুদিন সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। দ্রুত সড়ক, সেতু ও বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ বসানো জরুরী হয়ে পড়েছে। তা না হলে পার্কটি আস্তে আস্তে তার জৌলুস হারিয়ে ফেলবে। তবে ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের সহায়তায় একটি ব্রিজের সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

বরগুনা জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ বশিরুল আলম বলেন, ‘আমরা ইকোপার্কের সংস্কারের জন্য বন বিভাগের সাথে কথা বলেছি। ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি যাতে খুব দ্রুত টেংরাগিরি ইকোপার্কের সংস্কার কারা যায় সেজন্য এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথেও কথা বলেছি।’

 

 

পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদার, থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যবস্থা, রাস্তা- ব্রিজগুলো মেরামত এবং পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করা গেলে এখানে দিনদিন পর্যটক আরো বাড়বে। সি-বিচ, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী সব মিলিয়ে কুয়াকাটাকেও হার মানিয়ে দিয়ে এই বন হয়ে উঠতে পারে বরিশাল বিভাগের সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এমনটাই মনে করছেন প্রকৃতি প্রেমীরা।

কিভাবে যাওয়া যায়:

 

নদী পথে লঞ্ঝ, নৌকা ও সড়ক পথে বাস, মটরসাইকেল